Summary
কোন অঞ্চলে ফসলের জন্ম নিখুঁতভাবে নির্ধারিত হয় আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান দ্বারা, যা ফসল উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে প্রধান উপাদানগুলো হলো:
- সূর্যালোক: উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণে সূর্যালোক অপরিহার্য। Plants can be classified into light-loving and shade-loving categories.
- তাপমাত্রা: সকল উদ্ভিদের একটি নির্দিষ্ট কার্ডিনাল তাপমাত্রা থাকে, যা তাদের উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। উদ্ভিদকে ঠান্ডা ও উষ্ণ ঋতুর ফসে ভাগ করা যায়।
- বৃষ্টিপাত: পানি উদ্ভিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এবং বৃষ্টিপাত ফসলের জন্মের জন্য প্রধান উৎস।
- বায়ুপ্রবাহ: এটি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে, যেমন প্রস্বেদন ও পরাগায়ন।
- বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ: এটি উদ্ভিদ বৃদ্ধির জন্য সহায়ক বা ক্ষতিকর হতে পারে।
- শিশিরপাত ও কুয়াশা: এ দুটি আবহাওয়া ফসলের রোগ বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।
শিক্ষার্থীদের চারটি দলে ভাগ হয়ে এ উপাদানগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে উপস্থাপন করতে হবে।
কোন অঞ্চলে কী ধরনের ফসল জন্মাবে তা ঐ অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানগুলো ফসল উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার করে। এসব উপাদান কীভাবে ফসল উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার করে সে সম্পর্কে এখন আলোচনা করব।
১. সূর্যালোক: সূর্যালোক অনেকভাবে ফসল উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার করে। আমরা জানি উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে। এ প্রক্রিয়ায় সূর্যালোকের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমন্বয়ে পাতায় খাদ্য তৈরি হয়। সূর্যালোকের প্রয়োজন অনুসারে উদ্ভিদকে প্রধানত দুই ভাগ করা হয়; যথা- ক) আলো পছন্দকারী উদ্ভিদ ও খ) ছায়া পছন্দকারী উদ্ভিদ। ভুট্টা, আখ পূর্ণ সূর্যালোকে ভালো জন্মে আবার চা, কফি ছায়া পছন্দ করে।
দৈনিক আলোর সংস্পর্শে আসার সময় দিনের দৈর্ঘ্য ফসলের ফুল-ফল উৎপাদনে প্রভাব বিস্তার করে। দিনের দৈর্ঘ্যের উপর সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে উদ্ভিদকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়; যথা-
ক) দীর্ঘ দিবা উদ্ভিদ বা বড় দিনের উদ্ভিদ : এসব উদ্ভিদের ফুল-ফল উৎপাদনের জন্য দিনের দৈর্ঘ্য ১২ ঘণ্টার বেশি প্রয়োজন হয়। যেমন- আউশ ধান, পাট, চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, ধুন্দল ইত্যাদি।
খ) স্বল্প দিবা উদ্ভিদ বা ছোট দিনের উদ্ভিদ: এসব উদ্ভিদের ফুল-ফল উৎপাদনের জন্য দিনের দৈর্ঘ্য ১২ ঘণ্টার কম প্রয়োজন হয়। যেমন- গম, সরিষা, আমন ধান, গিমা, কলমি, পুঁইশাক।
গ) দিবা নিরপেক্ষ উদ্ভিদ : যেকোনো দৈর্ঘ্যের দিনে এসব ফসলের ফুল-ফল উৎপাদিত হয়ে থাকে। যেমন- চিনাবাদাম, টমেটো, কার্পাস তুলা ইত্যাদি।
২. তাপমাত্রা: বেঁচে থাকার জন্য সকল উদ্ভিদে একটি সর্বনিম্ন, সর্বোত্তম এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে। একে কার্ডিনাল তাপমাত্রা বলে। কার্ডিনাল তাপমাত্রা উদ্ভিদের প্রজাতি ও জাত ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। কোনো স্থানের ফসলের বিস্তৃতি কার্ডিনাল তাপমাত্রা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাপমাত্রার চাহিদা অনুযায়ী আবাদযোগ্য ফসলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; যথা- ঠান্ডা ঋতুর ফসল ও উষ্ণ ঋতুর ফসল।
ক) ঠান্ডা ঋতুর ফসল: এরা অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রা পছন্দ করে; যেমন- গম, আলু, ছোলা, মসুর, ফুলকপি, ওলকপি ইত্যাদি। এদের জন্মানোর জন্যে সর্বনিম্ন ০°-৫° সে., সর্বোত্তম ২৫°-৩১° সে. এবং সর্বোচ্চ ৩১°-৩৭° সে. তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়।
খ) উষ্ণ ঋতুর ফসল: এ ফসলগুলো অপেক্ষাকৃত উচ্চতাপমাত্রায় জন্মে; যেমন-পাট, রাবার, কাসাভা। এদের জন্মানোর জন্য সর্বনিম্ন ১৫°-১৮° সে., সর্বোত্তম ৩১°-৩৭° সে. এবং সর্বোচ্চ ৪৪°-৫০° সে. তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়।
৩. বৃষ্টিপাত : উদ্ভিদের জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিদ মাটিতে ধারণকৃত পানির উপর নির্ভরশীল। আর বৃষ্টিপাত মাটিতে ধারণকৃত পানির প্রধান উৎস। সেজন্য বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও সময় ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টিপাতের পার্থক্যের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ফসল জন্মে থাকে।
৪. বায়ুপ্রবাহ: প্রস্বেদন, সালোকসংশ্লেষণ, ফুলের পরাগায়ন ইত্যাদি বায়ু প্রবাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
৫. বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ: ফসলের প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে উচ্চ জলীয়বাষ্প সহায়ক। দানা গঠন পর্যায়ে নিম্ন জলীয়বাষ্প দানার সংকোচন ঘটাতে পারে। বাতাসে অধিক জলীয়বাষ্পের পরিমাণ রোগজীবাণু ও পোকার বিস্তার ঘটাতে সাহায্য করে।
৬. শিশিরপাত ও কুয়াশা : কোনো কোনো সময় শিশিরপাত ও কুয়াশা বায়ুর আর্দ্রতা বাড়িয়ে ফসলে রোগ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
| কাজ: শিক্ষার্থীরা চারটি দলে ভাগ হয়ে ফসল উৎপাদনে প্রভাব বিস্তারকারী আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন কর। |
নতুন শব্দ: স্বল্প দিবা উদ্ভিদ, দীর্ঘ দিবা উদ্ভিদ, দিবা নিরপেক্ষ উদ্ভিদ, আলো পছন্দকারী, ছায়া পছন্দকারী উদ্ভিদ, কার্ডিনাল তাপমাত্রা
Read more